প্রাথমিক জীব থেকে শুরু করে সবচেয়ে জটিল জীবের দেহ গঠনকারী সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদার্থটি আমিষ বা প্রোটিন। বস্তুত জীবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যে জীবদেহ প্রোটিন নির্মিত।
Protein (গ্রিক, proteios) শব্দের অর্থ- “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ” বা “শীর্ষস্থানীয়”। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ডাচ বিজ্ঞানী Mulder প্রোটিন শব্দটি প্রচলন করেন যা থেকে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, এ পদার্থটি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বা মূল উপাদান।
সাধারণভাবে আমিষ বা প্রোটিন বৃহৎ অণুসম্পন্ন একটি পলিমার (polymer)। কতকগুলো মনোমার (monomer)-এর পুনরাবৃত্তির ফলেই পলিমার গঠিত হয়। আমিষের ক্ষেত্রে প্রায় ২০টি অ্যামিনো এসিড মনোমার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটি অ্যামিনো এসিডের কার্বোক্সিল গ্রুপ (-COOH) অপর একটি অ্যামিনো এসিডের অ্যামিনো গ্রুপের (-NH2) সাথে যে বন্ধনী দিয়ে যুক্ত হয় তাকে পেপটাইড বন্ধনী (—CONH-) বলে। প্রত্যেক পেপটাইড বন্ধনী তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক অণু পানি উৎপন্ন হয়।
পেপটাইড বন্ধনী দিয়ে যুক্ত অ্যামিনো এসিডের সংখ্যার ভিত্তিতে কোন যৌগের নামকরণ করা হয়। যথা- দুটি অ্যামিনো এসিড দ্বারা গঠিত হলে ডাইপেপটাইড; তিনটি অ্যামিনো এসিড দ্বারা গঠিত হলে ট্রাইপেপটাইড ইত্যাদি।
প্রোটিনের সংজ্ঞা
প্রোটিনকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন-
১। প্রোটিন হচ্ছে উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট বৃহৎ অণুর জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা হাইড্রোলাইসিস (আর্দ্রবিশ্লেষণ) প্রক্রিয়ায় অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন করে।
২। প্রোটিন এক ধরনের বড় নাইট্রোজেন-ঘটিত জৈব অণু যেখানে বংশগতি বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রোটিন অ্যামিনো এসিড পরপর পেপটাইড বন্ধনের সাহায্যে সজ্জিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ও অনুক্রমে ধারাবাহিক অণুশৃঙ্খলের সৃষ্টি করে।
৩। প্রোটিন হচ্ছে এক ধরনের পলিমার যেখানে অ্যামিনো এসিডগুলো মনোমার হিসেবে উপস্থিত থাকে।
প্রোটিনের বিস্তার
জীবদেহে প্রতিটি অঙ্গের গাঠনিক বস্তু হিসেবে প্রোটিন বিদ্যমান। কোষের বিভিন্ন অংশ, যথা- মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, ক্রোমোজোম প্রভৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রোটিন। জীবদেহের জৈবনিক প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন, অ্যান্টিবডি প্রভৃতি প্রোটিনে তৈরি।
প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য
প্রোটিন কলয়েড প্রকৃতির, অধিকাংশ কেলাসিত। এটি পানিতে, লঘু এসিডে, ক্ষার এবং মৃদু লবণের দ্রবণে দ্রবণীয়। বহুবিধ ভৌত প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটানো যায়। প্রোটিন কার্বন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত। এতে সালফার , তামা ও আয়রন থাকে। একে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়। এসিড প্রয়োগে প্রোটিন জমাট বাঁধে। এর আণবিক গঠন পরিবর্তিত হয়। অনেক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটানো যায়।
প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ
ভৌত ও রাসায়নিক গুণ এবং এসিড (acid) বা প্রোটিওলাইটিক এনজাইম দিয়ে আর্দ্র বিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন পদার্থের ভিত্তিতে প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে।
American Society of Biological Chemist এবং American Physiological Society’র যৌথভাবে অনুমোদিত পদ্ধতি অনুসারে প্রোটিনকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- (১) সরল প্রোটিন, (২) সংশ্লেষিত/সংযুক্ত প্রোটিন এবং (৩) উদ্ভূত প্রোটিন।
(১) সরল প্রোটিন : যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। উদাহরণ হল অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি।
জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা
জীবদেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিন ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। জীবদেহের শুষ্ক ওজনের ৫০% প্রোটিন কারণ কোষের গঠনবস্তুর বেশিরভাগই প্রোটিন যুক্ত। জীবদেহে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
১। দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন- শ্বসন, রেচন, জনন ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য দেহের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পূরণ করার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
২। জীবদেহের এনজাইম জৈব অনুঘটকরূপে কাজ করে। এনজাইম প্রোটিনে তৈরি হয়। দেহের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া অর্থাৎ বিভিন্ন জটিল যৌগের সংশ্লেষ কিংবা জটিল যৌগের ভাঙনের জন্য এনজাইম বা উৎসেচক আবশ্যক। অর্থাৎ প্রোটিন পরোক্ষভাবে জীবদেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। জীবদেহের হরমোন রাসায়নিক দূত (chemical messenger) হিসেবে কাজ করে। বিশেষ কয়েকটি হরমোন, যেমন- ইনসুলিন, সোমাটোট্রফিক হরমোন (STH), লিউটিট্রফিন হরমোন (LTH) ইত্যাদি মূলত প্রোটিনে গঠিত।
৪। দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি সংশ্লেষের ক্ষেত্রে প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে।
৫। রক্তের হিমোগ্লোবিন এক ধরনের যুগ্ম প্রোটিন। এটি গ্লোবিন নামক প্রোটিন ও হিম নামক রঞ্জক নিয়ে গঠিত হয়।
এ সম্পর্কিত বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরঃ–
১. আমিষে শতকরা কতভাগ নাইট্রোজেন থাকে? (জ্ঞান)
(ক) ১২
(খ) ১৬
(গ) ২০
(ঘ) ২৪
সঠিক উত্তর : খ
২. কোনটিতে নাইট্রোজেন রয়েছে? (জ্ঞান) (ক) শর্করা
(খ) আমিষ
(গ) স্নেহ
(ঘ) খনিজ লবণ
সঠিক উত্তর : খ
৩. আমিষ জাতীয় খাবার কোনটি?
(ক) মধু
(খ) আটা
(গ) শিমের বীচি
(ঘ) আলু
সঠিক উত্তর : গ
৪. উৎস অনুযায়ী আমিষ কত প্রকার? (জ্ঞান)
(ক) ২
(খ) ৩
(গ) 8
(ঘ) ৫
সঠিক উত্তর : ক
৫. আমাদের খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে কতভাগ প্রাণিজ আমিষ থাকা দরকার? (জ্ঞান)
(ক) ১০ ভাগ
(খ) ২০ ভাগ
(গ) ৩০ ভাগ
(ঘ) ৪০ ভাগ
সঠিক উত্তর : খ
৬. মিশ্র আমিষে কয় ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়? (জ্ঞান)
ক) ৬
খ) ৭
গ) ৮
ঘ) ৯
সঠিক উত্তর : গ
৭. নিচের কোনটি সম্পূরক আমিষের উদাহরণ? (জ্ঞান)
(ক) নানারকমের চালের মিশ্রণ
(খ) নানারকমের ডালের মিশ্রণ
(গ) নানারকমের ফলের মিশ্রণ
(ঘ) নানা রকমের সবজির মিশ্রণ
সঠিক উত্তর : খ
৮. স্নেহ ও চর্বি জাতীয় পদার্থের কাজ কোনটি? (জ্ঞান)
(ক) তাপ ও শক্তি হ্রাস করে
(খ) তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে
(গ) রোগ প্রতিরোধ করে
(ঘ) তাপ ও শক্তি একই রকম রাখে
সঠিক উত্তর : খ
৯. উদ্ভিদের কোন অংশে আমিষের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে?
(ক) পাতা
(খ) ফুল
(গ) ফল
(ঘ) বীজ
সঠিক উত্তর : ঘ
Post a Comment