প্রাকৃতিক গ্যাস কাকে বলে? (What is called Natural gas in Bengali/Bangla?)

প্রাগৈতিহাসিককালে উদ্ভিদ ও জলাভূমির প্রাণী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কাঁদামাটির নিচে চাপা পড়ে। কাঁদা মাটির স্তর মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের বায়ুর উপস্থিতিজনিত ক্ষয়রোধ করে। উচ্চতাপ ও চাপে বায়ুর অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ হাজার হাজার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিণত হয়। উদ্ভিদ দেহ মাটির নিচে পরিবর্তিত হয়ে কয়লায় রূপান্তরিত হয়। অপরদিকে জলাভূমির ক্ষুদ্র প্রাণীসত্তা একই প্রক্রিয়ায় তেল বা পেট্রোলিয়ামে পরিণত হয়। পরিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তেল বা পেট্রোলিয়ামের উপরে গ্যাসীয় উপাদান জমা হয় যা প্রাকৃতিক গ্যাস নামে পরিচিত। ভূ-পৃষ্ঠের নিচে মিথেন থেকে বিউটেন পর্যন্ত অ্যালকেনের যে মিশ্রণ পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।


প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রকারভেদ (Types of Natural gas)

প্রাকৃতিক গ্যাস বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাসঃ যেসব প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম তেল থাকে না তা থেকে প্রাপ্ত গ্যাসকে শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।
  • আর্দ্র প্রাকৃতিক গ্যাসঃ তেলকুপে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসকে আর্দ্র প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।


প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার (Use of Natural gas)

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বেশিরভাগ ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ব্যবহারের দিক হতে এর পরই হল শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালী ও সিনজি (জ্বালানি) হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস বেশি ব্যবহার করা হয়।

প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিম্নরূপ :

১. প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (CH4)। মিথেনের দহনে কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি ও প্রচুর তাপ তৈরি হয়। এছাড়া এটি সহজেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা যায় এবং দহনে ধোঁয়া তৈরি করে না বলে গৃহস্থালি জ্বালানিরূপে এটি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

২. তাপশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়।

৩. বিভিন্ন শিল্প কারখানায় যেমন সিমেন্ট, পেপার, গ্লাস, সিরামিক কারখানায় জ্বালানিরূপে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়।

৪. উচ্চ দহনশক্তি এবং নিম্ন নকিং এর জন্য এটি যানবাহনে CNG (Compressed Natural Gas) রূপে ব্যবহার করা হয়।

৫. বিভিন্ন পেট্রোলক্যামিক্যাল তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়।

৬. ইউরিয়া উৎপাদনে CO2 ও H2 যোগান দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়।


বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কেন প্রয়োজন?

বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস : বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল থাকলেও কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে উৎপাদন প্রক্রিয়া ঠিক করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস অনেক দেশেই প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ কোনো দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য হলে এ গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক কম খরচে হয়। তাছাড়া কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সবচেয়ে কম খরচে হলেও তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পরিবেশের ক্ষতি হয় তবে তা অনেক কম। এছাড়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অপেক্ষ গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক উন্নত ও নতুন, তাই যান্ত্রিক ত্রুটি, সিস্টেম লস ও নিরাপত্তা ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণেই সার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়।


অনুশীলনী

১। প্রাকৃতিক গ্যাসের উপাদানগুলো কী কী?

উত্তর : প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হলাে মিথেন (৪০%)। এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাসে ইথেন (7%), প্রােপেন (6%), বিউটেন ও আইসােবিউটেন (4%) এবং পেন্টেন (3%) থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেছে তাতে 99.99% মিথেন থাকে।



আরো পড়ুনঃ-

১। পেট্রোলিয়াম কি? পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার। (Petroleum in Bengali)

Post a Comment

Previous Post Next Post